বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১১ অপরাহ্ন

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ সম্রাজ্য গড়ে তুলেন ইয়াবা মাফিয়া রোহিঙ্গা জাকের কালু ও সাব্বির

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ সম্রাজ্য গড়ে তুলেন ইয়াবা মাফিয়া রোহিঙ্গা জাকের কালু ও সাব্বির

মনসুর আলম মুন্না, স্টাফ রিপোর্টার: কক্সবাজার উখিয়া উপজেলার  কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক ইয়াবা সাম্রাজ্যের এক নতুন সম্রাটের সন্ধান মিলেছে। কুতুপালং ডাব্লিউ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা ছৈয়দ হোসেনের পুত্র ইয়াবা মাফিয়া জাকের আহমেদ ওরফে জাকের কালু ও সাব্বির মাঝি। তাদের দেখলে বুঝার উপায় নাই যে, সে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা এবং তাদের রয়েছে একটা শক্তিশালী ইয়াবা সিন্ডিকেট। ইয়াবা কেন্দ্রিক যত অপরাধ তিনি করেন সবই যেন তার নিত্য দিনের পেশা।

একসময়ের পারিবারিক অবস্থার বেহাল দশা থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা পাচার করে কোটি কোটি টাকার পাহাড় গড়েছে এই ইয়াবা মাফিয়া জাকের কালু সাব্বির মাঝি। ইয়াবার পাশাপাশি অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ে খুবই পারদর্শী এই ইয়াবা সম্রাট জাকের কালু ও সাব্বির মাঝব। জাকের সাব্বির ক্যাম্প ভিত্তিক অধিপত্যে বিস্তার করে মানুষকে জিম্মি করে।

দূর্ধর্ষ এই ‘জাকের কালু সাব্বির মিলে’ দীর্ঘ বছর ধরে আলোচনায় না আসলেও এখন সরকারের পট পরিবর্তনের ফলে বেরিয়ে পড়েছে একেকজন অবৈধ মাফিয়াদের তলের বিড়াল। এসব মাদক কারবারি ও অবৈধ মাফিয়ারা প্রতিদিন কোন না কোন কারণে ধরা খাওয়ার পর অনেকেই ছদ্মবেশে চলাফেরা করার একটি কৌশল অবলম্বন করছেন। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডাব্লিউ-১ ইয়াবা মাফিয়া জাকের ও সাব্বির মাঝির কারিশমার
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইয়াবা সম্রাট ‘জাকের কালু’র উত্থান যেভাবে..!

একেরপর এক তথ্য অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে একেরপর এক ভয়ংকর মাদকের ট্রানজেকশনের তথ্য সহ অসংখ্য অপরাধের তকমা । যার প্রতি চালানে ইয়াবা পাচার হয় অন্তত ১০ লাখ পিসেরও অধিক। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইতিমধ্যে তাদের দুজনের নেতৃত্বে শতাধিক অপহরণ করে মুক্তিপণ বাণিজ্যে করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার খবর পাওয়া যায়।  তিনি এসব টাকা দিয়ে রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারে পাঠিয়ে আরকান আর্মির সাথে যুদ্ধ করতে পাঠান মগবাগীদের বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জাকের কালুর পিতার নাম সৈয়দ নুর। কোন মতে সাংসার চলতো। অনেক সময় সংসার চালাতে হিমশিম খেত। কিন্তু পরিবারের অভাব অনটন লেগে থাকার সুবাধে ছোট থেকে ছেলে জাকের কাল ও তার সহযোগী সাব্বির  বিভিন্ন জায়গায় দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালানোর হাল ধরেছিল। বয়স এবং পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন বুনতো এই জাকের কালু ও তার সহযোগী সাব্বির । কোন এক আলাদিনের আশ্চর্য্য প্রদীপের ছোঁয়ায় প্রস্তাব পায় ইয়াবা ব্যবসার এবং ক্যাস্প ভিত্তিক যতসব অপরাধ কান্ডে। এই ইয়াবা, অপহরণসহ নানা  অপকর্ম  করে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্নও যেন তার কমতি ছিলনা। এরপর দীর্ঘ তিন বছর যাবৎ পুরোদমে ইয়াবা ব্যবসা ও নানা অপকর্ম  করে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির পাহাড় গড়েছে এই ইয়াবা সম্রাট জাকের কালু সাব্বির মাঝি।

প্রতিবেদেকের টানা ১৫ দিনের অনুসন্ধানে এই দূর্ধর্ষ ইয়াবা সিন্ডিকেট ও অপহরণকারীর বিরুদ্ধে বেরিয়ে এসেছে একের পর এক লৌমহর্ষক ঘটনা। এদিকে উখিয়া উপজেলা কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ডাব্লিউ – ১ নং ক্যাম্প থেকে তার বিভিন্ন বিশ্বস্ত ইয়াবা বহনকারী সিন্ডিকেট সদস্যদের মাধ্যমে ইয়াবা এনে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোন ও দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় পাচার করে আসছে। যার বদৌলতে এই কয়েক বছরের ভিতরে এত সম্পত্তি ও কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান চিহ্নিত এই মাদক কারবারি।

শুধু কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে নয়, পুরো ক্যাম্প এলাকায় তাদের রয়েছে সক্রিয় ইয়াবা ও চোরাচালানের সিন্ডিকেট। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় তাদের সক্রিয় সদস্য রয়েছে। যে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কক্সবাজার থেকে শুরু করে পুরো বাংলাদেশে প্রতিটি জেলায় ইয়াবা পাচার করে থাকে সিন্ডিকেটটি। জাকির কালু ও সাব্বির মাঝি একান্ত সিন্ডিকেটের মধ্যে কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প- ৫ এর আব্বাস, ক্যাম্প ডাব্লিউ-২ এর লুদু রহমান, ক্যাম্প ডাব্লিউ-২ এর জামাল, ক্যাম্প ডাব্লিউ-১ এর ইয়াসিন প্রকাশ জুকাইয়া অন্যতম। জাকিরের এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাম রাজত্ব চলছে পুরো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, তাদের এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জেলা থেকে অপহরণ করে ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে মুক্তি পণ আদায়, হত্যা, গুমসহ চলে নানা প্রকার অমানুষিক নির্যাতন। তাদের কার্যক্রম শুধু এখানে শেষ নয়, অবৈধ বর্ডার ক্রস বিভিন্ন পণ্যসহ মানব পাচার, অস্ত্র চোরাচালানের সাথেও তারা জড়িত রয়েছে।

এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক রোহিঙ্গা ব্যক্তি বলেন, যার ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরানো বিষয়টি লেগে থাকত। সেখানে হঠাৎ চোখের পলকে আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার মতো এত উত্থান কীভাবে হয়। আমরাও যেন হতবাক। বিষয়টি যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখলে তার আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।

বিশেষ সুত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করে এ ধরনের প্রাণঘাতী ইয়াবা মাদক চোরাচালানের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীরা রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশের যুবকদের ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে এই জাকের কালু ও তার সহযোগীরা। বহু বছর ধরে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার কারণে জাকের কালুর বহু রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাংলাদেশি সহযোগী রয়েছে।

মাদক চোরাকারবারি জাকের কালু ও সাব্বির মাঝির সাথে রাখাইন সশস্ত্র গ্রুপ আরাকান আর্মির (এএ)-এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যার কারনে মায়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে এত বড় মাপের মাদকের চালান পাচার করা সম্ভব হয়েছে

রাখাইন সশস্ত্র গ্রুপ আরাকান আর্মি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাগুলোর জন্য একটি বড় হুমকি। এই রাখাইন সশস্ত্র গ্রুপই মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ থেকে বিতাড়নের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে।

জাকের কালু ও তার সহযোগীরা দেশের একমাত্র জঘন্য ইয়াবা ব্যবসার মতো অপরাধে জড়িত রয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সে উখিয়া সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প হয়ে  বড় বড় ইয়াবার চালান সারা বাংলাদেশে পাঠায় বিভিন্ন সুকৌশলে। এই পর্যন্ত তার ইয়াবা নিয়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারে জেল খেটে যাচ্ছে অনেকে। এই পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি ক্যাস্প ভিত্তিক প্রশাসন।

দীর্ঘ এই সুত্র ধরে জানা যায়, ডাব্লিউ-১ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সবচেয়ে আলোচিত ইয়াবা ব্যবসায়ী অপহরণকারী রোহিঙ্গা জাকের ও তার একান্ত সহযোগী আব্বাস, লুদু ইয়াসিন, জুকাইয়া মিলে দীর্ঘ বছর ধরে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জোরালো হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা ক্যাম্প ভিত্তিক সাধারণ মানুষ ।

এবিষয়ে জাকেরের মুঠোফোনে একাধিক বার কল করা হলেও কল রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। নিজের ওয়াটসআপ নাম্বারে ভয়েস রেকর্ড পাঠিয়ে কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।

সচেতন মহলের দাবি এই সব ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কারণে আজকের যুব সমাজ থেকে শুরু করে পুরো দেশ মাদকের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দ্রুত এই রোহিঙ্গা জাকের কালুর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান সচেতন মহল।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2025 Protidiner Kagoj |